ভাণ্ড
দেহভাণ্ড উল্টে যায়, মনভাণ্ড নড়ে।
নিজ মুণ্ড কাটা গেছে। ধড় মাঠে চড়ে।
মাঠে ঘাস, চোখে ঘাস, শিশ্নে ঘাস লেগে;
প্রতিটি শ্মশান ফুঁড়ে গাছ ওঠে জেগে।
প্রতিটি রমণ ছিঁড়ে জেগে ওঠে তারা;
ঢলে পড়ে মহাকাশ। অথচ পাহারা
যতদিন দেহ ছিল, দিয়েছিল হাড়।
কিছুই হবার নয়, তবুও খাবার
ধড়ের ফুটোয় ঢালি, ধোঁয়া ওঠে খুব।
রক্তে ভরা স্নানাগার। আস্তে দাও ডুব।
হেঁটে যাই খঞ্জ খই ছড়াতে ছড়াতে
যে-যার মায়ের মুখে আগুন ধরাতে।
ধড় মাঠে চড়ে। আর দ্যাখে কাটা মাথা–
গৌতম স্তনের দুধ। অপত্য সুজাতা।
পাখিসংসার
বিকেলের গাছে বসে আমরা ভাইবোনেরা ঠোঁট মেলে
কিচিরমিচির করে যাচ্ছি–
“মা ফিরে আয়, মা ফিরে আয়।”
এই সদ্য সন্ধে হল। যত বেশি খিদে পাচ্ছ, তত যেন
ফেটে জুড়ছে রাগ।
তুমি এলে। দিদি একটু ঠুকরে দিল ডানা। ক্ষোভ। ক্ষোভ।
ভাই একটু ঠুকরে দিল আরও। আমিই বা বাকি যাই কেন…
সবাই ঠুকরে ভেঙে বাকি দেহ নীচে ফেলে দিয়ে
রেখে দিলাম চোখ গুঁড়ো-গুঁড়ো।
খুঁটে খুঁটে খাওয়া হল দৃশ্যগুঁড়ো রাতে। দিদির তেতো লাগল।
আমি, ভাই ততটা বুঝিনি।
শেষরাতে স্বপ্নে দেখলাম হুই উঁচু ডাল। ডালে সেই বিরাট পাখিটা
অচেনা একটা পাখিকে জাপটে ধরে কীসব করছে।
একটু দূরে বসে তুমি একবার “কা-আ-আ-আ” ডাকলে।
তারপর সব চুপ…
সকাল থেকে বমি হয়ে উঠে আসছে শোকের চাঙড়।
বিরাট পাখিটা আজও চিঠিতে ‘প্রযত্নে’ হয়ে ঝোলে…
বৃক্ষচরিত
যে-কোনো আতঙ্ক থেকে তুমি কিছু শস্য তুলে নাও।
অবিদ্যার কুমির, মগ্ন, কামড়ে আছে আলো-আলো পা।
আমি আর মহাব্যোমে উত্থান মাখাতে পারিনি।
রক্তস্রোত তথাগত, বাবার পাঁজরগুলি গলে গলে হবিষ্যির ভূত।
যে-কোনো শকুনের মুখে যৎসামান্য প্রক্ষালন দিলে
গাভীনিষেকের লিপি প্রত্নতত্ত্বে উল্টে দিয়ে ভাঁড়
স্থাপত্যের বীজাণু দুমড়ে উন্মাদের এত প্রতিবেশী,
সমস্ত প্রলাপ এই কল্পতামসে মন্ত্রের দোসর।
তুমি কি ভ্রূণের মধ্যে দেখতে পেলে মৃতসঞ্জীবনী?
অগুরু, ঘৃত, দূর্বা, কর্পূর ও নীহারিকা মেখে স্তব্ধ পুণ্যখাটে
শুয়ে আছে কত অবতার! আমরা হাঁটুর দাস, যে-যার অসুখ মুড়ে বসি–
আহা শ্রুতিখিদে! কাহিনি দৈব কর, অশ্বমেধ বেদীতে সাজাও।
যতটা নরক থেকে কামিনী ধোঁয়ার রূপ ওঠে, ততটা
বাষ্পের প্রেত এখনও মগজকর্তা নয়।
আর কী নেওয়ার মতো? যা নেবে তা আঙুলপ্রতিকূল।
তুমি যে মাংসগোষ্ঠী, তার আন্বীক্ষিকী নয় স্নায়ু।
শেষমেশ বৃক্ষ ছাড়া আর কোনো শ্মশানবন্ধু নেই;
জরামুগ্ধ তারই কাঠ আগুনের হাঁ-মুখ বাড়ায়।
গর্ভ
অলীক পুকুর মা। নৌকার চোখদুটি বোজা।
ভাসছে। সাবধানী বেশ।
যদিও পারের সাথে বাঁধা।
ফুটো শামিয়ানা রাত। আলো আসে। মহাজাগতিক।
লাঙল-পুরুষ, দ্যাখো,
বল্মীকে ছুঁইয়ে দিল কান।
ভেতরে উর্বর জলে শ্লোকের মাংস নড়ে ওঠে।
জন্মান্তর
অজস্র সুখের বিনিময়ে হাতে এল রক্তের ফুল। এ এমন পুরুষশরীর, মাঝে মাঝেই ঋতুস্রোত আসে। তাতে যা গড়িয়ে নামে, আঁজলা ভ’রে ঢেলেছি গলায়। তখনই তো বন্ধ হল চোখ, মনে নেই? মনে নেই আর? যেরকম নেশা হলে মন্দিরে সম্ভোগ মানায়, সেরকম ঘোরের ভেতর যত বেশি একাকী শরীর, ততই মন্ত্রের তালে পাঁজরের জানলা খুলে যায়।
তারপর দৈবদেহ ব্যক্তিগত জরায়ুমুখ চিরে ঢেলে গেল পরমান্ন, মোহ। সেই থেকে যতবার হন্যে হয়ে চাই ঋতুস্রোত, ততবার শিশুমাংস আসে। কত বীজ এভাবে বৃথা গেল।
অজস্র জন্মের বিনিময়ে দেহে শেষে নারীর প্রলাপ।
ঋতুস্রোত রাতে নিভে এলে অস্ফুটে “হারামজাদী” ডাকি,
একা মুচড়ে গিয়ে স্বমেহনে।